সোমবার, ২৭ Jun ২০২২, ১০:০২ অপরাহ্ন
কাজী হাসান ফিরোজঃ
আজ (২৮/০৭/২০২১) সকাল ৮ : ৩০ মি.। টিএন্ডটি অফিসের সামনে বোয়ালমারী পৌরসভার ময়লা ফেলার ভাগাড়ে একজন ৩০/৩৫ বছরের যুবক, মানুষের ফেলে দেয়া খাবারের মাঝ থেকে মুরগির মাংসের টুকরো এবং হাড় খুঁটেখুঁটে খাচ্ছে। প্রথম দেখায় মনে হবে মানসিক ভারসাম্যহীন কোন ব্যক্তি। প্রথম দেখাই যে চূড়ান্ত দেখা না একটু পরেই তা টের পেলাম।
ছবি তোলার ব্যাপারে আপত্তি জানিয়ে উঠে দাড়ালো। অনুরোধ জানালো তার অসহায় অবস্থার ছবি না তুলতে। তাকে জিজ্ঞেস করলাম ভাই,তুমি এই পঁচা খাবার খাচ্ছ কেন? উত্তর দিলো, ভাত পঁচে গেলেও মাংসের টুকরোগুলো পুরাপুরি পঁচে নাই। তারপর দার্শনিকের মত জবাব দিলো ‘ তিন / চারদিন এক নাগাড়ে না খাইয়ে থাকলি এইগুলা আপনের কাছেও পোলাও-কোর্মার চাইতে মজা লাগবেনে।
লোকটা বোয়ালমারীর কোন এক ইট ভাটার শ্রমিক ছিল। ভাটার মৌসুম শুরু না হলেও মাঝে মাঝে ভাটায় এবং মাঝে মধ্যে বিকল্প কাজ করতো। লক ডাউনে কোন কাজ নেই। বোয়ালমারী উপজেলা নির্বাহী অফিসারের সাথে যোগাযোগ করতে বলায় সে জবাব দিলো ‘ ওগো ক্ষিদে আমাগো চাইয়ে বেশি।’ বোয়ালমারী পৌর সদরের একটা হোটেলের ঠিকানা দিয়ে বললাম, আমার কথা বলে যে কয়দিন লকডাউন থাকে ওই হোটেল থেকে প্রতিদিন একবেলা খাবার খেয়ে যাবে। লোকটা বললো ‘ স্যার, নিত্য মরারে কেউ মাডি দেয়না। আমার তিন ভাই কাম হারায়ে মানিকগঞ্জের পুলিশের থেইকা দুইবেলা খাবার পাইছেলো, তৃতীয়বারে তাগোরে লাডি পেডা কইরে তাড়ায়ে দেছে।
সে কোন্ ইট ভাটায় কাজ করে, ইট ভাটার মালিকের নাম কি? জানতে চাইলে সে জানালো, মালিকের নাম বললে হয়তো সে আর কাজে ফিরতে পারবেনা। বাবা মানিকগঞ্জের হেকমত। থানা বা বাড়ির ঠিকানা সে বলেনি। তার নিজের নামটাও বলায় মৃদু আপত্তি। বারবার জিজ্ঞাসা করায় জবাব দিলো ‘এট্টু খাবার পেডে পড়ায় গাউডা কাঁপতাছে। স্যার, আমারে আর ঘাটায়েননা।
একশত টাকার একটা নোট তার হাতে তুলে দিতেই সে ছুট দিলো, হয়তো একপেট ভালো খাবারের সন্ধানে !